১। এজমালী সম্পত্তি ও বিভাগ (দায়ভাগ)
কোনও এজমালী পরিবারের কর্তাস্বরূপ পিতার যে সম্পত্তি থাকে–তাহা তাহার পৈতৃক সম্পত্তিই হউক বা ম্বোপার্জিত হউক—তাহার উপর তাহার জীবিতকালে তাহার পুত্ৰগণের কোনও দাবী চলিতে পারে না। অনেকের এইরূপ ধারণা আছে যে, কেহ যদি কোনও পৈতৃক সম্পত্তি প্রাপ্ত হন তাহা হইলে তিনি তাহা ইচ্ছামত হস্তান্তর বা উইল করিয়া তাহার পুত্রগণকে বঞ্চিত করিতে পারেন না। কিন্তু ইহা ভূল। দায়ভাগমতে, কোন হিন্দু তাহার পৈতৃক সম্পত্তি হউক, বা মনু কাহারও নিকট হইতে দান, উইল বা উত্তরাধিকারসূত্রে বা অন্য কোনরূপে প্রাপ্ত সম্পত্তি হউক, তিনি নিজ ইচ্ছামত যাহাকে ইচ্ছা দিতে পারেন, বা বিক্রয় করিতে পারেন, বা যেরূপ ভাবে ইচ্ছা (অর্থাৎ পুত্রগণকে না দিয়া বা তুল্য অংশে না দিয়া বা অন্য কাহাকেও দান করিয়া) উইল করিতে পারেন, তাহাতে পুত্রগণ কোনও আপত্তি করিতে পারেন না। পিতার জীবিতকালে ঐ সম্পত্তিতে পুত্ৰগণের কোনই স্বত্ব নাই। পিতার নিকট হইতে পুত্ৰগণ ঐ সম্পত্তির বিভাগের দাবি করিতে কিংবা ঐ সম্পত্তির হিসাব বা জমা খরচ চাহিতে পারেন না।
পুত্র যদি নিজে সম্পত্তি উপার্জন করিয়া তাহা পিতার হস্তে না দেন–নিজে পৃথক রাখেন—তাহা হইলে সেই সম্পত্তিতে অবশ্য তাহারই স্বত্ব হইবে—তাঁহার পিতার বা ভ্রাতার হইবে না। কিন্তু পিতা বর্তমানে যদি পুত্র পৈতৃক বাটতে কোনও বুদ্ধি বা উন্নতি সাধন করেন, তাহা হইলেও ঐ উন্নতিতে পিতারই স্বত্ব হইবে, পুত্রের কোনও স্বত্ব হইবে না, এবং পিতা ইচ্ছা করিলে পুত্রকে ঐ বাটী হইতে তাড়াইয়া দিতে পারেন, তাহাতেও পুত্র পিতার নিকট হইতে কোন ক্ষতিপূরণ আদায় করিতে পরিবেন না (ধৰ্ম্মদাস বঃ অমূল্যধন, ৩৩ কালকাতা ১১১৯; বিজয় বঃ আশুতোষ, ১৩ কলিকাতা উইক্লি নোটস ৩৯৬)।
পিতার মৃত্যুর পর পুত্ৰগণ পিতৃত্যক্ত সম্পত্তি এজমালীতে প্রাপ্ত হইয়া নিজ নিজ অংশ পৃথক করিয়া লইতে পারেন। তাঁহার নিজ অংশ ইচ্ছামত হস্তান্তরও করিতে পারেন; এবং বিভাগের পূৰ্ব্বে কোনও ভ্রাতার মৃত্যু হইলে তাহার অংশ তাহার ওয়ারিসে বৰ্ত্তিবে।
যে স্থলে কয়েক ব্যক্তি মিলিয়া সম্পত্তি এজমালীতে ভোগ করেন, সে স্থলে প্রায় একব্যক্তি কর্ত্তা বা ম্যানেজারস্বরূপ সমস্ত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করিয়া থাকেন। সম্পত্তি সম্বন্ধে উক্ত কৰ্ত্তার ক্ষমতা খুব বেশী। তিনি যে কাৰ্য্য করিবেন, তাহা দ্বারা অন্য ব্যক্তিগণ বাধ্য থাকিবেন। তিনি ইচ্ছা করিলে সম্পত্তির সমস্ত আয়ই পারিবারিক প্রয়োজনের জন্য খরচ করিতে পারেন। তিনি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কোনও পারিশ্রমিক বা সম্পত্তির কিছু অতিরিক্ত অংশ পাইবেন না। তিনি যদি সম্পত্তি হইতে কিছু আত্মসাৎ করেন, কিংবা পারিবারিক প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনও কার্য্যে কোন ব্যয় করেন, তাহা হইলে তজ্জন্য তিনি দায়ী হইবেন। এজমালী পরিবারের কন্যাগণের বিবাহ, বালকদের উপনয়নও বিদ্যাশিক্ষা, পরিবারবর্গের ভরণপোষণ, পৈতৃক ঋণ পরিশোধ, পূজা, ধৰ্ম্মকাৰ্য্য, বিগ্রহসেবা, শ্ৰাদ্ধ, প্রয়োজনীয় মামলা মোকদ্দমা চালান, রাজস্বদান—এই সকল কাৰ্য্যকে পারিবারিক প্রয়োজন বলা হয়, এবং এই কাৰ্য্যগুলির জন্য উক্ত কর্ত্তা এজমালী সম্পত্তির আয় হইতে অর্থব্যয় করিতে ক্ষমতাপন্ন, এমন কি সম্পত্তির আয় হইতে সঙ্কুলান না হইলে ঋণ করিতেও পারেন; কিন্তু এই সকল পারিবারিক প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনও কার্য্যে অর্থব্যয় করিতে পারিবেন না, করিলেও তিনি তজ্জন্য নিজে দায়ী হইবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন