বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭

গীতা সম্পর্কে কিছু কথা



গীতা সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিন:
হিন্দু ধর্মে একক বা স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই। ঋগ্বেদ দিয়ে এই ধর্মের যাত্রা শুরু। অতঃপর শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে আরো তিন খণ্ড বেদ (যেমন: যজুর্বেদ, সামবেদ, ও অথর্বদেব)-সহ ডজন ডজন ধর্মগ্রন্থ (যেমন: রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, উপনিষদ, পুরাণ, মনুসংহিতা, ইত্যাদি) রচনা করা হয়েছে। তার মানে শুধুই ঋগ্বেদ বা এমনকি চার খণ্ড বেদ দিয়েও হিন্দু ধর্মকে পূর্ণভাবে উপস্থাপন করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ- রামায়ণ ছাড়া যেমন রামের কোনো অস্তিত্ব নেই, মহাভারত ছাড়া কৃষ্ণেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। কাজেই রাম ও কৃষ্ণে বিশ্বাস করতে হলে যথাক্রমে রামায়ণ ও মহাভারতে বিশ্বাস করতেই হবে। অন্যদিকে হিন্দুদের একদম মৌলিক বিশ্বাসগুলো (যেমন: অবতারবাদ, জন্মান্তরবাদ, ও নির্বাণ) এসেছে গীতা-উপনিষদ থেকে, বেদ থেকে নয়। কাজেই হিন্দু ধর্ম থেকে যদি রাম, কৃষ্ণ, অবতারবাদ, জন্মান্তরবাদ, ও নির্বাণকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে বর্তমান হিন্দু ধর্ম বলে কিছু থাকবে না। পাশাপাশি অসংখ্য দেব-দেবী ও তাদের উপর ভিত্তি করে রচিত পৌরাণিক কাহিনীগুলো তো আছেই। এজন্যই হয়তো শিক্ষিত ও মডারেট হিন্দুরা গীতার উপর যতটা গুরুত্ব দেয়, বেদের উপর ততটা গুরুত্ব দেয় না। তবে সবচেয়ে পুরাতন এবং সেই অর্থে মৌলিক ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বেদকে তারা উপেক্ষাও করতে পারে না। আবার গীতাতে যেহেতু কোনো সামাজিক আইন-কানুন নেই সেহেতু আইন-কানুনের জন্য তাদেরকে মনুসংহিতার দ্বারস্থ হতে হয়।
যাহোক, গীতা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। ভারতীয় দর্শনের অন্যতম ভিত্তিও এই গীতা। এতে বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত দার্শনিক তত্ত্বের সার সংগৃহীত হয়েছে। তাই গীতাকে হিন্দু ধর্মের সকল ধর্মগ্রন্থের সারগ্রন্থও বলা হয়। গীতাকে হিন্দুরা এতটাই গুরুত্ব দেয় যে, তাদেরকে যদি বেদ ও গীতার মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয় সেক্ষেত্রে গীতা ছেড়ে বেদকে বেছে নেওয়ার মতো কাউকেই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে তাদের কাছে গীতা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হলেও এটি মহাভারতের একটি অংশ, স্বতন্ত্র কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়। সেই গীতা থেকে কিছু বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হবে।
কৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং গড বা ঈশ্বর
গীতার কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছেন কৃষ্ণ। হিন্দুশাস্ত্রীয় বিবরণ বা লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২৮ সালে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কৃষ্ণের পূজা করে থাকে। একাধিক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে তাকে বিষ্ণুর অবতার রূপে গণ্য করা হয়; অন্যদিকে কৃষ্ণধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায়গুলিতে তাকে ঈশ্বর এর মর্যাদা দেওয়া হয়। কৃষ্ণকে যেহেতু ঈশ্বর হিসেবে বিশ্বাস করা হয় সেহেতু তাদের কাছে গীতা হচ্ছে ঈশ্বরের বাণী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রেস্টুরেন্ট_HD