![]() |
দূর্গাপূজা |
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসবের প্রকৃত তত্ত্ব কী , পূজা শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে-“যা করলে জীবনে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হয়”। পূজা শব্দটি এসেছে পূজ ধাতু থেকে। এই পূজ ধাতুর অর্থ হচ্ছে ‘বর্ধনশীলতা। উৎসব শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘উৎস অভিমুখে গমন’ অতএব পূজা বা উৎসব শব্দটি একই অর্থ বহন করে। এই দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসবের মধ্যে দুটি তত্ত্ব নিহিত আছে। একটি জাগতিক বা সাংসারিক এবং অন্যটি আধ্যাত্মিক। এ পূজার জাগতিক অর্থ হল বাস্তব জীবনের উন্নয়ন। দুর্গাপূজা করা মানে হচ্ছে দুর্গা হওয়া। দুর্গার দশটি হাতের অর্থ হল দশদিকের কর্মযোগ্যতা বা দক্ষতা। একজন নারী যখন সংসারের সকল কর্মে দক্ষতা লাভে ব্রতী হয় তখনই তার সংসার সুন্দর হয়। আর সুন্দর সংসার হতে হলেই লক্ষ্মী-সরস্বতীর মত কন্যা এবং গণেশ-কার্তিকের মত পুত্র হওয়া বাঞ্চনীয়। আর সুন্দর সন্তান জন্মাতে প্রয়োজন স্বামীর প্রতি অবিচ্ছেদ্য টান। শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন, “স্বামীর প্রতি টান যেমনি, ছেলেও জীবন পায় তেমনি”। তাই দুর্গাপূজার শিবঠাকুর দেবীর মাথার উপরে।
দুর্গার দশটি হাতের মধ্যে একটি আশির্বাদের অভয় হস্ত এবং বাকী নয়টিই হচ্ছে প্রহরণ যন্ত্র। এই নয়টি প্রহরণ যন্ত্র দিয়ে মহা শক্তি জগতের অমঙ্গলকে ধ্বংস করবে। তাই প্রতিটি মা যদি জীবন্ত দুর্গা না হয়ে ওঠে তবে এ পূজার সার্থকতা কোথায়? মাটি দিয়ে গড়া এ প্রাণহীন প্রতিমাকে তাই পুরোহিত মন্ত্রপুত করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, চক্ষুদান করেন। তেমনি প্রতিটি নারীর মাঝে ইষ্টমন্ত্র বা দীক্ষাদান পূর্বক নূতন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও জ্ঞান চক্ষুদান করে জগতের দুর্গতি নাশে যত্নবান হলেই আমাদের এ দুর্গাপূজা সার্থক হবে। সংসার যখন দুর্গা-মণ্ডপে পরিণত হবে তখনই হবে এ পূজার সার্থকতা। নতুবা মাটির পূজা মাটি হয়েই যাবে। দুর্গাদেবী তত্ত্বের আধ্যাত্মিক দিক এখন আসা যাক আধ্যাত্মিক অর্থের দিকে। একটি মানবদেহের তিনটি ধারা ইড়া, পিঙ্গলা এবং সুষুম্না। এই সুষুম্নাতে অবস্থিত ছয়টি চক্র। এগুলি হচ্ছে মূলাধার, সাবিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, আজ্ঞা এবং সহস্রার। আমাদের মণিপুর চক্র বা দশম দলে দুর্গা পূজা হয়। মূলাধারে চতুর্থদল পদ্মে মহামায়া অবস্থিত। ভক্ত যখন প্রণব বীজের সাহায্যে মহামায়ার মায়া বন্ধন ছিন্ন করত সাবিষ্ঠানচক্র পার হয়ে মণিপুর চক্র বা দশম দলে সাধনায় ব্রতী হয় তখনই শুরু হয় যোগমায়া বা দুর্গাদেবীর সাধনা। এই সাধনায় সিদ্ধ হলে মানুষ মায়াপাশ ছিন্ন করতে পারে এবং ত্রিতাপের জ্বালা থেকে নিস্কৃতি পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন