রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মানসিক চাপের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত ৬ টি উপায়।

দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ ব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিতে পারে এবং সুস্থ চিন্তাধারা বিকাশে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একটি সুস্থ মস্তিস্ক-সম্পন্ন জীবনধারার অংশ হিসাবে, মানসিক চাপ সুচারু এবং কার্যকর ভাবে মোকাবেলা করার প্রয়োজন রয়েছে। যখন এটা বুঝতে পারেন যে আপনি মানসিক চাপ আক্রান্ত তখন আপনি কি করতে পারেন? আরও গুরুত্ব দিয়ে বলতে, কোনরূপ মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভব না করে বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সহনশীলতা গড়ে তুলতে আপনি কি করতে পারেন?
৬ টি গবেষণা ভিত্তিক জীবনধারা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এখানে দেয়া হল যা মানসিক চাপ মোকাবেলায় এবং সহনশীলতা তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারেঃ

১।  শরীরচর্চা
সময়ব্যাপী, ক্রমাগত মানসিক চাপ ধীরে ধীর স্নায়বিক মৃত্যুর
(neuronal death) মাধ্যমে নিউরজেনেসিস (neurogenesis) রোগের উদ্ভব ঘটায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যারোবিক শরীরচর্চা নতুন স্নায়ুকোষ গঠনে সাহায্য করে। ব্রেনে মানসিক চাপের প্রভাব প্রতিরোধে শরীরচর্চা একটি বেশ ভাল উপায়। মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক লোকদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে এটা দেখা গেছে। ২০১২ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যারা বেশী শরীরচর্চা করেছে তাদের তুলনায় যারা শরীরচর্চা করেনি তাদের মধ্যে মানসিক চাপ সংক্রান্ত hippocampus বেশী দেখা গেছে।
মানসিক চাপের দ্বারা যা সাধারণত বেশী বাধাগ্রস্ত হয়, সেই ঘুমকে ভাল ভাবে হতে সাহায্য করে নিয়মিত শরীরচর্চা। এছাড়াও, শরীরচর্চা মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতার ভাব কমিয়ে দিয়ে তার বদলে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে পারে যা “ভাল অনুভব” করার জন্য দায়ী নিউরোট্রান্সমিটার এন্ডোরফিন (endorphins) এর উপাদন বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে। নাম দেখে যেমনটি বোঝায়, এন্ডোরফিন এর (endogenous এর থেকে endo- এসেছে এবং morphine থেকে –orphin ) বেদনা নাশক প্রতিক্রিয়া আছে যা ভাল অনুভব করার মত একটি অবস্থা সৃষ্টি করে। এটি শরীরচর্চার সময় যেমন দেহে তৈরি হতে পারে তেমনি উত্তেজনা, বেদনা, ভালবাসার প্রকাশ, এবং রাগমোচন (orgasm) এর সময়ও তৈরি হতে পারে।

২।  প্রশমিতকরণ (Relaxation)
মেডিটেশন, টাই চাই, যোগ, বা বেঞ্চের উপর হাঁটা ইত্যাদি যেভাবেই হোক না কেন রিলাক্সেসন এর মাধ্যমে রক্তচাপ কমে, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়, এবং পেশীর টান প্রশমিত হয়। এটি মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার একটি ভাল উপায়। ২০০৮ সালে
University of Michigan এর একদল গবেষক প্রাকৃতিক পরিবেশে অথবা শহুরে পরিবেশে হাঁটার ব্যপারে সচেতনতা পুনরুদ্ধার মূলক এক কৌতূহল উদ্দীপক গবেষণা করেছেন। তারা যে সচেতনতা মূলক বিষয়ের উপর দৃষ্টিপাত করেছেন তা ছিল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মনোযোগ আকর্ষণকারী। এ গবেষণাতে অংশগ্রহণকারীরা প্রথমে ৩৫ মিনিটের একটি কাজ করেছেন যা তাদের মনোযোগকে দুর্বল করেছে। এরপর তারা ৫০ মিনিট ধরে শহরে অথবা বড় পার্কে হেটেছিলেন। তাদের ফেরার পরে, যে সকল অংশগ্রহণকারীরা শহরে হেটেছিলেন তাদের তুলনায় যারা পার্কে হেটেছিলেন তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মনোযোগ আকর্ষণকারী একটি পরীক্ষায় অনেক ভাল ফলাফল দেখিয়েছেন।
মজার ব্যাপার হল, দ্বিতীয় একটি গবেষণাতে, ঐ একই রকম প্রকৃতির পুনরুদ্ধার মূলক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে যখন কোন লোক নিছকই ৫০ টি প্রকৃতির ছবির (শহরের কোন ছবি বাদে) দিকে তাকিয়ে ছিলেন। গবেষকগণ তাদের গবেষণার এই ফলাফলকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ভিন্নতর, শহুরে পরিবেশে প্রচুর মনোযোগ বিক্ষিপ্তকারী উদ্দীপক থাকে (যেমন, একটি চকচকে দ্রুত ধাবমান গাড়ি) যা অবশ্যই মনোযোগে হস্তক্ষেপ করে (অর্থা, ঐ গাড়ির মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হয়)। এর ফলাফল স্বরূপ এটা বলা যায়, শহুরে পরিবেশের তুলনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মনোযোগ আকর্ষণ প্রতিস্থাপন সক্ষমতা বেশী এনে দেয়।

৩. সামাজিকীকরণ (Socialization)
বন্ধু, পরিবার, এবং এমনকি পোষা প্রাণীদের সামাজিক পরিবেশের বলয়ে থাকলেও তা বিশ্বাস, সমর্থন, এবং প্রশমিতকরন বজায় থাকতে সাহায্য করে। বহু ধরণের ঘটনা দেখা গেছে যেখানে সন্তোষজনক সামাজিক সম্পর্ক মানসিক এবং দৈহিক উভয় রকমের স্বাস্থ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষত আমরা জানি যে একাকীত্ব হৃদরোগ জাতীয় অসুস্থতার ঝুঁকি ও মানসিক চাপের মাত্রা বাড়ায় এবং ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এটির বিষন্নতার সাথেও যোগসূত্র আছে। একজন মানুষের তার সামাজিক বলয়ের সাথে নিছক যে সংযোগ আছে তার চেয়ে একাকীত্ব একজন মানুষের আরও কত বেশী ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে তার সাথে বেশী সম্পর্কিত। এটি সুপারিশ করে যে কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা হয়ত মানসিক চাপ সহনীয় রাখার এবং সুস্থ থাকার চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।

৪. ক্ষমতায়ন (empowerment)
ক্ষমতায়ন বলতে আসলে কি বোঝায়? এর মানে আমাদের নিজেদের জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিকের নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি—যার মধ্যে আছে মানসিক স্বাস্থ্য। গবেষণাতে মানসিক ক্ষমতায়ন এবং মানসিক চাপের স্থিতিস্থাপকতার মধ্যে সম্পর্ক দেখা গেছে। কারো নিজের উপর ক্ষমতা আরোপের উপায় খোঁজা ক্রমাগত মানসিক চাপের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে।

৫. রসবোধ (humor)
সহজ জ্ঞানে, আমরা এটা বুঝতে পারি যে একটি চম
কার হাসি মানসিক চাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বেশ সহায়ক মনে হতে পারে, এবং প্রকৃতপক্ষে গবেষণা এটা সুপারিশ করেছে যে এটি তা করতে পারে। উদাহরন স্বরূপ, Marry Bennett এবং তার সহকর্মীরা এটা দেখিয়েছেন যে, একটি কৌতুকপূর্ণ ভিডিও (একটি পর্যটন বিষয়ক ভিডিও দেখানোর বিপরীতে) দেখার মাধ্যমে একদল স্বাস্থ্যবান মহিলার মধ্যে স্ব-আরোপিত মানসিক চাপ কমতে দেখা গেছে।
২০০৪ সালে পরিচালিত এক নিউরোইমেজিং গবেষণাতে দেখা গেছে যে স্ব-আরোপিত আনন্দ অথবা দুঃখ বোধ ব্রেনের সেই একই অংশকে প্রভাবিত করে যে অংশকে সত্যিকারের আবেগ প্রভাবিত করে। এছাড়াও, কাল্পনিক হাসির বিষয় সাফল্যজনক ভাবে স্ব-আরোপিত দুঃখবোধ এবং কাল্পনিক কান্নার বিষয় স্ব-আরোপিত আনন্দ কমিয়ে দিতে পারে। ১৯৮৯ সালে পরিচালিত অপর একটি ছোট গবেষণাতে দেখা গেছে যে এতে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ মিনিট ব্যাপী একটি কমেডি ভিডিও দেখানোতে তাদের কর্টিসোল (cortisol) এবং ইপিনেফ্রাইন (epinephrine) এর মাত্রা কমে গেছে, যা এটা বোঝায় যে হাস্যরস মানসিক চাপের হরমোন জনিত প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ক্রিয়া করতে সহায়ক হতে পারে।
৬. ইতিবাচক চিন্তাভাবনা
মানসিক চাপের উপাদান গুলি সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা মানসিক চাপকে সহনীয় করতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরন স্বরূপ, ২০১০ সালে
Jeremy Jamieson এবং তার সহকর্মীদের দ্বারা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত ছাত্রদের এ বিষয়টি বিশ্বাস করতে কোচিং দিয়েছিলেন যে পরিক্ষার পূর্বে নার্ভাস এবং/বা উত্তেজিত বোধ করাতে আসলে তাদের ফলাফল ভাল হবে। অন্য ভাবে বলতে, তারা ছাত্রদেরকে একটি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে দিয়ে তাদের মানসিক চাপকে পুনঃমুল্যায়িত করাতে পেরেছিলেন। গ্র্যাজুয়েট স্কুল প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পূর্বে ছাত্ররা গবেষকগণ প্রদত্ত উপরোক্ত কোচিংটি গ্রহণ করেছিল। তুলানা করে দেখা গেছে যারা ৩ মাস পূর্বের প্র্যাকটিস টেস্ট এবং আসল পরীক্ষা উভয়টির সময়েই উপরোক্ত বিষয়টিতে কোচিং করেছিল তারা যারা কোচিং করেনি তাদের চেয়ে বেশী ভাল স্কোর অর্জন করেছে।
সাধারণভাবে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা আপনার মন মানসিকতা এবং আনন্দবোধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মানসিক চাপের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। Dr. Emmons এটা দেখিয়েছেন যে একটি “gratitude journal” রাখার ব্যবস্থা করলে এবং তাতে আপনি যা কিছু থেকে উপকৃত হয়েছেন তা লিখে রাখলে আনন্দিত হওয়ার মাত্রা এবং ভাল থাকার স্ব-আরোপিত মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়।
এসকল মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলির মধ্যে কোনটি আপনার জন্য বেশী উপযোগী হবে? এর কোনটি আপনি অনুসরণ করতে চেষ্টা করবেন?

প্রজি কুমার রায় এম.এ.এল.এল.বি
বীর মুক্তিযোদ্ধা
সহকারী পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি (অবঃ)
সাবেক কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালায়।
ম্যানেজার, এক্সটার্নাল এফেয়ার্স
এসএসডি-টেকনোলজি
কার্নিভাল ইন্টারনেট।
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, মহানগর কমিটি, ঢাকা ও
নির্বাহী সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ 
জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রেস্টুরেন্ট_HD