শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭

ডায়াবেটিস ও প্রতিকার।


ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ। আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারনে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সংগে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোন রোগ নয়।

ডায়াবেটিস হয়েছে কিভাবে বুঝবেন এবং ডায়াবেটিস হলে সাধারণত যেসব লক্ষন ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয়ঃ
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
  • খুব বেশী পিপাসা লাগা।
  • বেশী ক্ষুধা পাওয়া।
  • যথেষ্ঠ খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা।
  • ক্ষত শুকাতে দেরী হওয়া।
  • খোশ-পাঁচড়া,ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া।
    চোখে কম দেখা।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ।
ডায়াবেটিসের মূলত চারটি ধরন রয়েছে।

ক) ধরন ১ (টাইপ.১)- এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরী হয় না। সাধারণতঃ ৩০ বৎসরের কম বয়সে (গড় বয়স ১০-২০ বৎসর) এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। সু্‌স্থ্য থাকার জন্য এ ধরনের রোগীকে ইনসুলিন নিতে হয়। এই ধরনের রোগীরা সাধারনত কৃষকায় হয়ে থাকেন।

খ) ধরন ২ (টাইপ.২)- এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রিশ বৎসরের উপরে হয়ে থাকে। তবে ত্রিশ বৎসরের নিচে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয় তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ঠ নয় অথবা শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় এই দুই ধরনের কারণ একই সাথে দেখা দিতে পারে। এই ধরনের রোগীরা ইনসুলিন নির্ভরশীল নন। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এবং নিয়িমিত ব্যয়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব। এই ধরনের রোগীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে স্থূলকায় হয়ে থাকেন।

গ) অন্যান্য নির্দিষ্ট কারণ ভিত্তিক শ্রেণী-
  • জেনেটিক কারনে ইনসুলিন তৈরী কম হওয়া
  • জেনেটিক কারনে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
  • অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ
  • অন্যান্য হরমোনের আধিক্য
  • ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ
  • সংক্রামক ব্যধি
  • অন্যান্য কোন প্রতিরোধ ক্ষমতার জটিলতা
এই ধরনের রোগী ক্ষীণকায় ও অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে এবং ইনসুলিন ছাড়া অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। এই ধরনের রোগীর বয়স ৩০ বৎসরের নিচে হয়ে থাকে।

ঘ) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস-অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আবার প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এই প্রকারের জটিলতাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ডায়াবেটিস হলে গর্ভবতী,ভ্রুণ,প্রসূতি ও সদ্য-প্রসূত শিশু সকলের জন্যই বিপদজনক হতে পারে। বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রয়োজনে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। এই ধরনের রোগীদের প্রসব হাসপাতালে করা প্রয়োজন।
 
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
  • বারডেম
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
  • বেসরকারী হাসপাতাল।
  • জেলা সদর হাসপাতাল
কি কি পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারেঃ
  • খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা
  • ভরা পেটে রক্ত পরীক্ষা
  • প্রস্রাব পরীক্ষা
  • কোলেস্টরল,থাইরয়েডের কার্যাবলী,যকৃত এবং কিডনী পরীক্ষা
ডায়াবেটিসের চিকিৎসাঃ
ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সারানো বা নিরাময় করা যায় না। তবে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এই বিষয়ে ডাক্তার রোগীকে সাহায্য করতে পারেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চারটি নিয়ম মানতে হয়ঃ
ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ
খ) সাধ্যমত কায়িত পরিশ্রম ও ব্যায়াম
গ) ঔষধ
ঘ) শিক্ষা
 
প্রতিটি পর্যায়ে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ -ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যে রকম থাকে পরেও একই থাকে। পুষ্টির চাহিদার কোন তারতম্য হয় না। খাদ্যের নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে:ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্য ভাল রাখা।

খ) ব্যায়াম-রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম করলে শরীর সু্‌স্থ থাকে,ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নি:সরনের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত: ৪৫ মিনিট হাঁটলে শরীর যথেষ্ঠ সু্‌স্থ থাকবে। শারীরিক অসুবিধা থাকলে সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।

গ) ঔষধ-সকল ডায়াবেটিক রোগীকেই খাদ্য,ব্যায়াম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রেস্টুরেন্ট_HD