শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭

মাতা পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।


সন্তানের জন্য ইশ্বরের ইচ্ছা হচ্ছে তার মাতাপিতা। একারণে সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার গুরুত্বও সবচেয়ে বেশি। তাদের অধিকার প্রদান করাই সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সব থেকে প্রথমে যেটা আসে তা হলো পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বোঝা না ভেবে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা সন্তানের দায়িত্ব সকল ধর্মে বলা হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি বৃদ্ধ অবস্থায় তার বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সেবা-যত্ন করল না তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।’ পাশ্চাত্য মনীষী রাস্কিন মনে করেন পৃথিবীতে মানুষের তিনটি কর্তব্য আছে-‘‘Duty towards God, duty towards parents and duty towards mankind’’. ফলে পেশাগত সফলতা টিকিয়ে রাখতে এবং তথাকথিত অভিজাত সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম। এই অপসংস্কৃতির হাওয়া আমাদের দেশেও বইছে। আমাদের শিক্ষিত সচেতন সমাজের উচিত এটা রোধ করা। তাই পিতা-মাতা মনে কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়।
বিভিন্ন ধর্মে পিতামাতার স্থান: ধর্ম যাই হোক সন্তান এবং পিতা-মাতার মধ্যকার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো একই রকম ও অকৃত্রিম। প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সকল ধর্মের পবিত্র স্থান মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ আসনে ভূষিত করার কথাবলা হয়েছে। ‘পৃথিবীতে যদি সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত অন্য কাউকে সন্মান করার হুকুম দেওয়া হতো, তবে তা হতো মাতা-পিতাকে সন্মান করা।’ হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি।’ খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকমের কথা উল্লেখ আছে। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে বলা হয়েছে ‘মাতাপিতার সেবা করাই সবচেয়ে উত্তম’।ইসলাম ধর্মেও মাতা পিতার
স্থান উর্ধে বলা হইয়াছে।
মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত: ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (স.) শৈশবেই তাঁর মাকে হারিয়ে দুধমাতা হালিমার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। দুধমাতা হলেও তিনি তাঁকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। হযরত বায়েজীদ বোস্তামি ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী, হাজী মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণ: সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার যথাযথ লালন-পালন, তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা এসব ঘিরেই পিতা-মাতার জগৎ। পিতামাতা সন্তানের জন্য সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করেন। সব বাবা-মার একটাই প্রত্যাশা-‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার নিরলস সাধনা বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক মাতা-পিতাই চান তাদের ছেলেমেয়েরা সুসন্তান হিসেবে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াক, সকল প্রকার অন্যায় ও মিথ্যাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করুক। এসব প্রত্যাশা পূরণ করার মাধ্যমেও তাদের প্রতি কর্তব্য পালন করা যায়।
অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকা: সব রকম পরিস্থিতিতে পিতামাতার প্রতি অনুগত থাকতে হবে এবং বিরক্ত হওয়া যাবে না। সন্তান যতো বড় মাপের মানুষই হোক না কেনো বাবা-মার কাছে সে শুধুমাত্র তাদের সন্তান। বাবা-মা তাদের সাধ্যমতো আমাদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কখনও কিছু দিতে ব্যর্থ হলে তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। সন্তানের কাছ থেকে তারা সন্তানস্বরূপ বিনয়ী আচরণই আশা করেন। পিতামাতা সন্তানের সর্বোত্তম বন্ধু তাদেরকে শান্তিতে এবং চিন্তামুক্ত অবস্থায় রাখা সন্তানের কর্তব্য।
পিতামাতার আদর্শ ও সম্মান বজায় রাখা: প্রত্যেক সন্তানেরই উচিত তাদের পিতামাতার আদর্শ ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করে চলা। সমাজে তাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। পিতামাতার ভালোবাসা এতটাই গভীর যে সন্তান বিপথগামী হলেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। তাই সব সময় তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে। তবে পিতামাতা যদি ধর্মবিরোধী কোনো কাজ যেমন-শিরক ও কুফরে লিপ্ত হতে বলে তবে সে ক্ষেত্রে তাদের নির্দেশ মানা যাবে না। সমাজে যারা পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মী  তাদের সাথে ।\


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রেস্টুরেন্ট_HD